দলীয় বৈঠকে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Bandyopadhyay) ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেব (দীপক অধিকারী)-কেই প্রার্থী করা হবে। দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তিনিও যে ভোটে লড়তে প্রস্তুত, অভিনেতা-সাংসদও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার মাসখানেকের মধ্যেই, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দেব(Dev)। শুধু তা-ই নয়, ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। এতেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তিনটি সরকারি কমিটি থেকে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে কি ভোটে লড়তে না-চাওয়ারই বার্তা দিলেন তিনি?

 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দেব জানিয়েছিলেন, তিনি আর লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে চান না। জেলায় দলের একাংশের বক্তব্য ছিল, ঘাটালের প্রাক্তন বি‌ধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের সঙ্গে ‘বিবাদের’ জেরেই রাজনীতি নিয়ে ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে পড়েছিলেন সাংসদ। যদিও দেব সে কথা কখনওই নিজের মুখে স্বীকার করেননি। দলেরও কেউ এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। আসন্ন লোকসভা ভোটে দেব প্রার্থী হবেন কি না, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় জল্পনার অবসান হয় গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বৈঠকে। সেই বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আমাদের দলের সম্পদ। বেশ কিছু নেতা তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করেছে, যার ফলে ওঁর অসুবিধা হচ্ছে। এমনটা কেন হবে? ও শিল্পী মানুষ। এটা তোমরা কী করছ?’’ মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতাদের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন উপস্থিত নেতারা।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায় দলীয় নেতারা বুঝেছিলেন, ঘাটালে দেবকেই(Dev) আবার প্রার্থী করতে চাইছেন দলনেত্রী। আর দলনেত্রীর নির্দেশ থাকলে তাঁরও যে ফের লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অসুবিধা নেই, পাল্টা সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল দেবও। কিন্তু তার পর আচমকা কেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইস্তফাপত্রেও কোনও কারণের উল্লেখ করেননি অভিনেতা, সাংসদ। তাতেই আরও জল্পনা বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঘাটালে বাংলার সিনেমার সুপারস্টার দেবকে (Dev)প্রার্থী করে চমক দিয়েছিলেন মমতা(Mamata Bandyopadhyay)। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে পরাজিত করে সাংসদ হন তিনি। ২০১৯ সালে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার জয়ী হন দেব(Dev)। কিন্তু ঘাটাল থেকে মাঝেমধ্যেই দেবের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের বিবাদের খবর প্রকাশ্যে আসে। তাই এ বার লোকসভা ভোটের অনেক আগেই ফের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মমতা বৈঠকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যে ভাবে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন, তাতে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী ফের হিসাবে তাঁকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দেবের ঘাটাল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে এ ভাবে ইস্তফায় আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

অন্য দিকে, ২০১৯ সালে দেবের(Dev) সঙ্গেই আরও দুই অভিনেত্রী তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। যাদবপুরে মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) ও বসিরহাট থেকে সাংসদ হয়েছেন নুসরত জাহান(Nusrat Jahan)। তাঁরা কি ফের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন? দেবের বিষয়টি নিয়ে জল্পনা বাড়তেই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের নিয়ে।

Exit mobile version