মহা ধুমধাম করে বহু প্রতীক্ষিত অযোধ্যা রাম মন্দিরের (Ayodhya Ram Mandir) উদ্বোধন হল আজ অর্থাৎ সোমবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন রামলালার। তিন বছর ধরে অসংখ্য শ্রমিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই মন্দির নির্মাণ করেছেন। সাদা মার্বেলে তৈরি এই মন্দিরের ভাস্কর্য মুগ্ধ করেছে সকলকে। হাজার বছরেরও টলানো যাবে না এই মন্দিরের ভীত। এর পিছনে রয়েছে কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি?

 

হিন্দু ভাবাবেগের সঙ্গে মিশে গিয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) নির্মাণের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এক হাজার বছরের বেশি অক্ষত করে রাখতে সহায়তা করবে। এটি আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়ই বটে। আর্কিটেক্টরা জানাচ্ছেন, শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং ভয়ংকর ভূমিকম্পের সামনেও অক্ষত থাকবে অযোধ্যার রাম মন্দির। এমন ভাবেই মন্দিরটির নকশা তৈরি করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা।জানা যাচ্ছে, অযোধ্যার এই রাম মন্দির ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে সক্ষম। এক হাজার বছরেও এর মেরামতির প্রয়োজন পড়বে না। নির্মাণকারী সংস্থা অযোধ্যা থেকে নেপাল পর্যন্ত ভূমিকম্পের প্রবণতা মেপেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এই অযোধ্যার গ্র্যান্ড রাম মন্দির নির্মাণ করেছে। ৩৬০টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির। প্রত্যেকটি স্তম্ভই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং সুবিন্যস্ত। প্রত্যেকটি স্তম্ভে রয়েছে উদ্ভাবনী নির্মাণ কৌশলের স্পষ্ট ছাপ।

 

রাম মন্দিরের (Ayodhya Ram Temple) নকশা ঐতিহ্যবাহী নাগারা শৈলীর স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত, যা ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বলেই জানাচ্ছেন অ্যার্কিটেক্টরা। যে পাথর দিয়ে মন্দিরের এই স্তম্ভগুলি নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলি দীর্ঘস্থায়ী। রাম মন্দির নির্মাণে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এর ভিত্তি। এটি একটি ঘূর্ণিত কমপ্যাক্টেড কংক্রিটের ১৫ মিটার পুরু স্তরের উপর নির্মিত। যার মধ্যে রয়েছে ফ্লাই অ্যাশ, ধূলিকণা এবং রাসায়নিক পদার্থ। এই কমপ্যাক্টেড কংক্রিটের মোট ৫৬টি স্তর রয়েছে রাম মন্দিরে (Ayodhya Ram Temple)। এটিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রানাইটের ২১ ফুট মোটা প্লিন্থ যা গোটা নির্মাণ মন্দিরটিকে আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করবে।

 

নির্মাণকারীরা গত তিন বছরে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঢালাইয়ের সময় কমপ্যাক্টিং কংক্রিটের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রির নীচে রাখা বড় কঠিন  ছিল। এর জন্য বরফ ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রার প্রভাব কমাতে এই কাজ কেবল রাতেই করা হয়েছে। কেবলমাত্র এই কমপ্যাক্টিংয়ের প্রক্রিয়ার জন্য ১৫০ জন ইঞ্জিনিয়র এবং হাজার জন শ্রমিককে নিয়োগ করা হয়। চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পরামর্শের ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ররা মাটির উপরের অংশ অপসারণ করে ১৫ মিটার কাদামাটি খনন করেন। তারপর সেটি অন্য মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। ইঞ্জিনিয়ররাও ওই অঞ্চলের বন্যার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখেছেন। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, ভবিষ্যতের ভয়ংকর বন্যা থেকে এই রাম মন্দির সম্পূর্ণ নিরাপদ।

Exit mobile version