কিশোরী কন্যার প্রথম ঋতুস্রাবের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মায়েদের এই পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে পরিচিত করাতে প্রস্তুত থাকতে হয়। শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে নানা পরিবর্তন হয় এই সময়। সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই ঋতুমতী হয় মেয়েরা। বেশ কিছু সামাজিক বাধা নিষেধ মানতে হয় এই সময় ফলে অনেকের মধ্যেই মানসিক পরবর্তন ঘটে। কিন্তু সময়ের আগেই যদি ঋতুমতী হয় তাহলে কী করণীয়? চলুন জেনে নিন।

 

সঠিক সময়ে হলে
মেয়েদের ঋতুস্রাবের সঠিক বয়স ১০-১৪ বছর। কিন্তু অনেক সময় কিশোরী মেয়েদের সাত পেরতে না পেরতেই  শুরু হচ্ছে পিরিয়ড। মা, মেয়ের সম্পর্ক বন্ধুত্বের হলেও একটা নির্দিষ্ট বয়সেই মা মাসিকের সম্বন্ধে মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। তাতে উভয় পক্ষেরই সুবিধা হয়। বহু মা-ই সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে। ৮-১০ বছর বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব হলে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে প্রিকশাস পিউবার্টি (Precocious Puberty)। এই পরিস্থিতির কারণ অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। কয়েকবছর আগেও এই ঘটনা বিরল ছিল। করোনার পর থেকে গত কয়েক বছরে মধ্যে যা বহুগুণে বেড়েছে।

 

ওবেসিটি অন্যতম কারণ
ওবেসিটি এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। শিশুদের জীবনযাপন ঠিক নেই, বাইরের ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় শরীরে মেদ জমছে। ফলে ফ্যাট সেলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ‘লেপটিন’ নামক হরমোনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়ে ডিম্বাশয়ে পৌঁছতে লেপটিন হরমোন সাহায্য করে। সুতরাং যদি ৭-৮ বছর বয়সে ওবেসিটির জন্য শরীরে ফ্যাট ও অ্যাডিপোস সেল বেশি থাকলে সঠিক সময়ের আগে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হচ্ছে।

 

হরমোন্যাল কারণ

বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনগুলো ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের প্রভাবে হয়। সাধারণত এই হরমোনটি ডিম্বাশয় থেকে ১০-১৫ বছর বয়সে নির্গত হয়, কিন্তু মস্তিষ্কের নানা অসুখের কারণে অনেকেরই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সময়ের আগেই ক্ষরণ হয়। ফলে আগাম ঋতুমতী হচ্ছে। তবে ৮০-৯০% ক্ষেত্রে সেইভাবে কোনও কারণ পাওয়া যায় না।

 

জেনেটিক কারণ

মায়ের ৮-১০ বছরে ঋতুস্রাব শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েরও সেই প্রবণতা থাকতে পারে।

 

রোগের কারণ

১০-২০% ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর অসুখ যেমন ব্রেন টিউমার, মেনিনজাইটিস, ব্রেনে রেডিয়েশন ও ইনফেকশন, মস্তিষ্কে আঘাত বা শিশুবেলায় খিঁচুনি মত লক্ষণ থাকলে আগাম মাসিক শুরু হয়। আবার ওভারিতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা সিস্ট থাকলে ইস্ট্রোজেন হরমোন খুব বেশি পরিমাণে নির্গত হলেও সময়ের আগে ঋতুস্রাব হয়। কোনও অসুখে চিকিৎসার জন্য বাইরের থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ট্যাবলেট দেওয়া হলেও ৮-১০ বছরেই মাসিক শুরু হবার সম্ভাবনা থাকে।

 

  1. সময়ের আগে ঋতুমতী হলে  কী চিন্তার?
    মেয়েরা ৩০ বছর বয়সের পর কতটা সুস্থ থাকবে তা নির্ভর করে কার কত বছর বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব হচ্ছে তার ওপর। সঠিক সময়ে পিরিয়ড না হলে অনেকেরই অল্পবয়সে অস্টিওস্পোরোসিস হওয়ার এবং অনেকের ইউটেরাসে টিউমার হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
  2. ডায়াবেটিস, কার্ডিওলজিক্যাল ডিজিজ ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
  3. অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা খুব কম বয়সে মেনোপজের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
  4. ওজনও বাড়তে পারে।

 

কীভাবে সতর্ক হবেন

১) ছোট থেকেই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন ঠিক রাখা। সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকা, ঘরে বসে পড়াশোনা, খেলাধুলা কম, মনে অতিরিক্ত চাপ, ওজনবৃদ্ধি এই বিষয়ে অধিকাংশ শিশুই আজকাল অভ্যস্ত। এই সব বিষয় থেকে দূরে রাখতে হবে।

 

২) কন্যাকে মানসিকভাবে শান্ত রাখুন। বেশি চাপ, চিন্তা অল্প বয়স থেকেই চাপিয়ে দেবেন না।

৩) খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন।

৪) এছাড়াও অতীতের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখতে হবে। প্রবল জ্বর, খিঁচুনি, চোখের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তির ইতিহাস থাকলে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসাউন্ড ও মস্তিষ্কের এমআরআই খুব জরুরি।

৫) এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা-সহ বিভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের হরমোন, থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা উচিত। শরীরে এই হরমোনের পরিমাণের তারতম্য হলেও ঋতুস্রাব বয়ঃসন্ধির আগে হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: Ramlala Idol: ঘুমের প্রয়োজন রামলালার, কখন মিলবে দর্শন?

Exit mobile version