আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। মোটামুটি কার জয় নিশ্চিত তা ইতিমধ্য়েই জনমত সমীক্ষাগুলির রিপোর্টে স্পষ্ট। ইঙ্গিত ২০২৪-এ ‘ফের একবার মোদী সরকার’। জয়ের ব্যাপারে মোটামুটি ১০০ শতাংশ কনফিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)। তৃতীয় মেয়াদেও প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে মোদী আসীন হতে চলেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বয়স ৭৩, তবুও তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই তাঁর এখন ‘প্রায়োরিটি’ কত আসন দখল করতে পারবে তাঁর দল।

 

রবিবার দিল্লির জাতীয় অধিবেশনে বক্তব্য় রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)। তিনি যে সিংহাসনে বসতে চলেছেন সেকথা নিজে মুখেই জানিয়েছেন। কার্যত নিজের গুণগান গেয়ে মোদী বলেন, ‘নির্বাচন (Loksabha Election 2024) হতে এখনও বাকি। কিন্তু এখনই অন্য দেশগুলো থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে বিদেশে ডাকছে। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? তার মানে বিশ্বের নানা প্রান্তের সমস্ত দেশের মানুষ জানে, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি তারা জানে, আয়েগা তো মোদী হি।’

মোদীর সমালোচকরাও এক বাক্যে স্বীকার করেন তাঁর সঙ্গে লড়াই করার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী মুখ এখনও পর্যন্ত দেশে নেই। কেন অন্যান্য নেতাদের থেকে একেবারে আলাদা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? কোন যাদুবলে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া?

 

১. সাহসী
কয়েক দশক ধরে মোদী যে ‘স্টেপ’গুলি নিয়েছেন সেগুলো বিরোধীদের চোখে ‘মাস্টার স্ট্রোক’ হিসাবে প্রমাণ করেছেন। একাংশ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, পোড় খাওয়া রাজনীতিক মোদীজি(Narendra Modi)। কোথায়-কখন কী ভাবে কৌশলী চাল দিতে হবে তা তাঁর নখদর্পণে। অসীম ধৈর্য্য তাঁর সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি।

 

২. প্রযুক্তি বান্ধব
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) ৭৩ বছর বয়সী হতে পারেন, কিন্তু তিনি নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে উপস্থাপন করেছেন যিনি আধুনিকতা থেকে দূরে সরে যান না বরং এটিকে ভালবাসেন। প্রযুক্তিকে আপন করে নিতেই ভালোবাসেন নমো। মোদী সরকারের আমলেই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ এবং ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া’-এর মতো উদ্যোগ চালু হয়েছে। ডিজিটাল দুনিয়ায় বিপ্লব এসেছে ভারতে। UPI বিশ্বের নিরাপদ এবং সহজ পেমেন্ট সিস্টেম হয়ে উঠেছে। ক্যাশলেস ইকোনমি থেকে পেপারলেস পার্লামেন্টের মতো ধারণা নিয়ে এগিয়ে চলেছে মোদী সরকার। পাশাপাশি দেশের একাধিক ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে আপন করে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মোদী।

 

৩. জনগণের নাড়ি ধরে রাখা
জনগণের পালস বোঝেন তিনি। জনসাধারণ কী চাইছে, কী চাইছে না তা সহজেই বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। জনগণের মেজাজ বোঝায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরও এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর(Narendra Modi) সবচেয়ে বড় শক্তি এই নয় যে তিনি খুব ভাল বক্তা বা তাঁর ভাবমূর্তি দাগহীন, তবে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণের মন বোঝা।

 

৪. বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
একাংশ রাজনৈতিক মহলের মতে, বড় ও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না মোদী। নোটবন্দীকরণ হোক বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান জানানো হোক কিংবা কোভিড -১৯ এর জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপই হোক মোদী(Narendra Modi) সরকার একের পর এক এমন অনেক শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রশংসিত হয়েছে গোটা বিশ্বেও।

 

৫. শক্তিশালী বিদেশ নীতি
মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে মোদির বিশেষ বন্ধুত্ব নজর কেড়েছে সকলের । কাতারে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটজন প্রাক্তন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসারকে যখন মৃত্যদণ্ডের আদেশ শোনায় সেদেশের আদালত তখন বিরোধীদের মোদী সরকারকে আক্রমণ করে ধেয়ে আসে সমালোচনার বন্যা। তবে সেই সমালোচনার ঢেউ ডিঙোতে অবশ্য বেশি সময় নেননি মোদী। ভারতের চেষ্টাতেই রদ হয়েছে তাঁদের মৃত্য়ুদণ্ড। সম্প্রতি আট ভারতীয় প্রাক্তন নৌসেনা অফিসারকে মুক্তি দিয়েছে কাতার সরকার।

 

৬. দলীয় নেতাদের একসূত্রে গেঁথে রাখার ক্ষমতা
মোদীর(Narendra Modi) আর একটি গুণ যা না বললেই নয় তা হল দলীয় নেতাদের এক সূত্রে গেঁথে রাখার ক্ষমতা। শীর্ষ স্তরের নেতাদের মধ্যে মন কষাকষি দ্রুত তার সমাধান ও সকলে এক ছাতার তলায় রাখার ক্ষমতাও তাঁকে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করেছে। বিজেপি বা মোদী সরকারে যোগ্য লোকের অভাব নেই, কিন্তু কেউ মোদীর নেতৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছে এমনটা কখনও হয়নি।

 

৭. দূরদর্শী নেতা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর(Narendra Modi) একজন দূরদর্শী নেতার ইমেজ রয়েছে দল নিয়ে হোক বা দেশের কথাই হোক দূরদর্শী চিন্তা ভাবনার জন্য মোদীর পরিচিতি রয়েছে। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হয়ে উঠবে ভারত। তাঁর দাবিকে সমর্থন করেছেন বিদেশের বিশ্লেষকরাও।

 

৮. দাগহীন শক্তিশালী ইমেজ
সবচেয়ে বড় মাপকাঠি যার দ্বারা বেশিরভাগ বিরোধী নেতারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছেন তা হল তাদের অনবদ্য ভাবমূর্তি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী ১৩ বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন। সেই সময়েও তার পিঠে দুর্নীতির একটি দাগও পড়েনি। ১০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির কালো ছায়া মুক্ত।

 

৯. রাজনীতি ও শাসনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা
গুজরাটে ১৩ বছর রাজত্বর পর কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। ২৩ বছর ধরে শাসন করার অভিজ্ঞতা তাকে যেকোনো বিরোধী নেতা থেকে আলাদা করে।

 

১০. সুবক্তা
রাজনীতির আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুবক্তা হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীকে একজন উজ্জ্বল বক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হত। অটলের বক্তৃতা শোনার জন্য মানুষ নীরব থাকত। আর বর্তমানে মোদীর বক্তব্যে হাততালির ঝড় ওঠে।

 

Exit mobile version