bhoot pori bengali movie review

ভূত না পরী নাকি ভূতের পরি হয়ে ওঠার গল্প। তবে এই ভূত কিন্তু গ্রাম বাংলার মিস্টি ভূত,  ইংরেজি ভূতের মতো ভয়ানক নয়। এখানকার ভূতেদের সঙ্গে গল্প করা যায়, চোখ পাকিয়ে বকুনি দেওয়া যায়, চাইলে দু’-চারটে কাজও করিয়ে নেওয়া যায়। প্লট টা শুনলে ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ভূতনাথ সিনামা- টার কথা একটু মনে পড়ে যায় বটে কিন্তু এই গল্পটি লেখা কিন্তু লীলা মজুমদারের। লীলা মজুমদার তেঁনাদের নিয়ে কেমন সব নোনতা-মিষ্টি গল্পের স্বাদই ধরা দিল সৌকর্য ঘোষালের ‘ভূতপরী’ ছবিতে। বনলতার (জয়া আহসান) সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময়ে সূর্য (বিষান্তক মুখোপাধ্যায়) গোলগোল চোখে প্রশ্ন করে, ‘ভূতেরা তো দেখছি মানুষকে ভয় পায়! তা হলে কি এত দিন আমাদের ভুল বোঝানো হয়েছিল?’’

 

সৌকর্যর ছবিতে ভূত আছে, সিঁধেল চোর আছে, আর আছে গ্রাম বাংলার রূপরস। সবচেয়ে বেশি যে আছে সে একটা খুদে বিচ্ছু, সূর্য। বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতায় থাকে সে। সূর্যর স্লিপওয়াকের সমস্যা আছে। শিলালিপি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। ডাক্তার পরামর্শ দেয়, বেড়াতে যাওয়ার। তবে পাহাড়ে নয়, তাতে ঝুঁকির সম্ভাবনা আছে। শিলালিপি তার গ্রামের বাড়ি যায়। সেই ভাঙাচোরা পেল্লায় বাড়িতে । কংক্রিটের জঙ্গলে তো ভূত বা ভূতপরী কোনটাই থাকতে পারে না। সেখানে থাকে শুধু মানুষবেশী রোবট। তাই ‘ভূতপরী’র গল্প বলার জন্য চাই সবুজ গ্রাম, ইট পাঁজরা বেরিয়ে আসা বাড়ি, ঘন গাছের ছায়াপথ। 

 

গল্পটা কিন্তু শুধু ভূতের আশেপাশেই ঘোরে না , বরং গল্পে অনেক গুলো হিডেন বার্তাও আছে । যেমন, এই যে মহিলাদের কে আমরা সবসময় গয়না পরে দেখি এক নজরে দেখলে মনে হয় মহিলারা এটা খুব পছন্দ করে। কিন্তু এটা তো শিকলের মত হতে পারে! সেই ব্যাপারটা এখানে খুব দারুণভাবে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও গ্রামবাংলায় যে জাতি প্রথা নিয়ে সমস্যা ছিল সেটাকেও এখানে দেখানো হয়েছে। তবে কোনো ঘটনাকেই খুব বেশি রং চড়িয়ে আসল গল্পটাকে ছন্নছাড়া করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি।

 আরও পড়ুনঃ Mithun Chakraborty: মিঠুনের শারীরিক অবস্থার খোঁজ প্রধানমন্ত্রীর! কবে ছুটি?

 

গ্রামের বাড়িতে সূর্য, তার মা আর এক চাকর থাকে। ছেলে সারাদিন টো-টো করে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরঘুর করতে করতেই বনলতা আর সিঁধেল চোর মাখনের (ঋত্বিক চক্রবর্তী) সঙ্গে মোলাকাত হয় ছেলেটির। এই দু’জনের সঙ্গে সূর্যর বন্ধুত্বই ছবির সবচেয়ে ভাল লাগার জায়গা। গল্প কথায় উঠে আসে সূর্যর পূর্বপুরুষ তন্ত্রসাধক কালো ঠাকুরের (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) কালো কীর্তি, জানা যায় কেমন করে ভূত হল বনলতা। যে হালকা মেজাজ দিয়ে কাহিনি শুরু হয়েছিল তা ক্রমে সিরিয়াস দিকে বাঁক নেয়। তার পর সব কিছু বড় দ্রুত হয়ে গেল।

 

ভূতের ছবিতে একটু গা ছমছমে ভাব থাকা ভাল। তবে সিনেমা হলে কোনও ভৌতিক অনুভূতি হয় না। পুজোর আগের সময়ে গল্প হলেও, তার কোনও আমেজ পাওয়া যায় নি ছবিতে। শেষ দৃশ্যে শিলালিপির হাতে অঞ্জলির থালা ধরিয়ে দিয়ে, কি করা হল সেটা ঠিক বোঝা গেলো না।

 

ছবিতে জয়া আহসান, ঋত্বিক চক্রবর্তীর মতো প্রতিভাবান অভিনেতা রয়েছেন। লাল বেনারসি, সোনার গয়না পরা জয়া যথার্থই ভূতপরী। ঋত্বিকে চরিত্রের মাধ্যমেই পরিচালক কমিডি সৃস্টি করেছেন । সূর্যর মায়ের চরিত্রে সুদীপ্তার বেশি কিছু করার ছিল না। তবে নজর কেড়ে নিয়েছে ছোট্ট বিষান্তক। 

 

সৌকার্য ঘোষাল জানেন বাচ্চাদের কিভাবে ছবিতে ব্যবহার করতে হয় বাচ্চাদের যাতে একদম বাচ্চাদের মতোই লাগে। তাদেরকে যেন অতিরিক্ত কিউট বা অতিরিক্ত পাকা না লাগে সেরকমভাবে তিনি গল্প পোট্রে  করেন।  এবং সৌকার্যর সেই দৃষ্টান্ত আমরা এর আগে রামধনু জেলি সিনেমাতেও খুব ভালোভাবেই দেখতে পেয়েছি।

 

movie review

Exit mobile version