Miss Universe 2023 Jane Dipika Garrett

ওজন আবার সৌন্দর্যের বাধা হয় নাকি ? সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় তো আর মানুষকে রোগা হিলিহিলে, দুধে আলতা রংয়ের কথা তো উল্লেখ নেই। তারা শ্যামলাও হতে পারে আবার পৃথুলাও হতে পারে। 

 

২০২৩ সালের মিস ইউনিভার্স এই বছরে একটু বেশি চর্চিত । আসলে ২০২৩ সালে,আগে থেকে বহু বছর ধরে চলে আসা মিস ইউনিভার্সের সব স্টেরিওটাইপগুলি এবারে ভেঙে গেছে। বিশ্বব্যাপী এলজিবিটি কিউ কমিউনিটির নিরন্তর প্রচারের ফলে, এ বছরে ট্রান্সজেন্ডার প্রতিযোগী থেকে শুরু করে প্লাস সাইজের মডেলরাও সবাই আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মিস ইউনিভার্স ২০২৩ এর প্রতিযোগী হয়ে ইতিহাসে তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। এই সময় নেপালের প্লাস সাইজ মডেল ও মিস ইউনিভার্স এর 2023 এর প্রচুর শিরোনাম অর্জন করেছে।

Miss Universe 2023 Jane Dipika Garrett
Jane Dipika Garrett

 

নেপালের গ্যারেট মিস ইউনিভার্স ২০২৩এ প্রথম প্লাস সাইজ মডেল হয়েছেন মিস নেপাল। জেন দীপিকা গ্যারেট (Jane Dipika Garrett) একজন প্রতিযোগী হিসাবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করা প্রথম প্লাস সাইজ মডেল হয়েছেন। এল সালভাদারে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক প্রতিযোগিতার সময় ২২ বছর বয়সী গ্যারেট যখন রানওয়েতে হাঁটছিলেন তখন তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। সবাই তাকে নিয়ে পাগল হয়েগেছিল।

 

এটি নেপালের পাতলা চেহারার মডেলগুলির সমস্ত স্টেরিওটাইপ ভেঙে দিয়েছে। মিস ইউনিভার্স ২০২৩এ নেপালের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন একজন সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী প্লাস সাইজ মডেল। জেন দীপিকা গ্যারেট (Jane Dipika Garrett)। যাই হোক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গ্যারেটের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করে।

plus size miss universe

তন্বী বলতে যা বোঝায়, তা তিনি নন। কোমরের বেড়, জিন্সের ফিটেই স্পষ্ট ‘৩৬-২৮-৩৬’-এর বাঁধাগতে তিনি ধরা পড়েন না। থুতনি-গালে কাঠকাঠ ধারালো ব্যাপার একেবারেই নেই। বরং একটু বেশিই গোলগাল। হাসলে গাল দুটো আরও কিছুটা ফুলে ওঠে।

 

শরীরের মাপজোকে সর্বত্রই অতিরিক্ত কয়েক ইঞ্চির ‘যুক্তাক্ষর’ স্পষ্ট । কারণ তিনি ‘প্লাস সাইজ়’। তবু সে সবের পরোয়া না করেই তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন সৌন্দর্যের ব্রহ্মাণ্ড জয়ের লক্ষ্যে। নাম দিয়েছিলেন বিশ্বমানের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়।

 

যু্ক্তি ছিল সোজাসাপটা— সৌন্দর্যের আবার কোনও বাঁধাধরা সংজ্ঞা হয় নাকি? কেউ কি বলে দিয়েছে, সুন্দরীদের রোগা, হিলহিলে, দুধে-আলতা রঙের হতেই হবে! তারা শ্যামলা হতে পারবেন না বা পৃথুলা হতে পারবেন না? তাঁদের চেহারা বালুঘড়ির মতো হতেই হবে?

plus size miss universe

অবশ্য বালুঘড়িকে যদি আদর্শ মানতে হয়, তবে তেমন ঢেউখেলানো চেহারা তাঁরও আছে। বস্তুত শরীরের ঢেউকে ভালইবাসেন তিনি। প্লাস সাইজ় তাই তাঁর আত্মবিশ্বাস ‘মাইনাস’ করতে পারেনি।

 

মূলত এই সব ভাবনায় ভর করেই ২২ বছরের দীপিকা জেন গ্যারেট নাম লিখিয়েছিলেন বিশ্বমানের শীর্ষ স্থানীয় এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়। আর কী অদ্ভুত, সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন।

 

আরও পড়ুনঃ ব্যাঙ্ক ধর্মঘট, জেনে নিন দিনক্ষণ

 

এককালে সুস্মিতা সেন, লারা দত্তদের মতো বলিউড অভিনেত্রীরা যে মুকুট জয় করেছিলেন, সেই ‘ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরী’র খেতাব জয়ের মঞ্চে ডাক পেয়েছিলেন দীপিকাও।

 

রবিবার, ১৯ নভেম্বর সেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিচার ছিল মধ্য আমেরিকার এল সালভাদরে। নাহ, দীপিকার মাথায় জয়ের মুকুট ওঠেনি। তবে খেতাব না জুটলেও প্রাপ্তির ঝুলি ভরে নিয়েছেন গোলগাল চেহারার এই ২২ বছরের মেয়েটি।

 

সেরার মুকুট জিতেছেন যিনি, তাঁর মতোই পরিচিতি জুটেছে দীপিকারও। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খেতাবজয়ী সুন্দরীর পাশাপাশি আলাদা করে বলা হয়েছে দীপিকার নাম। লেখা হয়েছে আলাদা প্রতিবেদন। প্রত্যেকেরই বক্তব্য এক— সৌন্দর্যের বিশ্বমঞ্চে ইতিহাস তৈরি করেছেন দীপিকা।

Jane Dipika Garrett

তাঁর দৌলতেই প্রথম ছক ভাঙল ওই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। এই প্রথম হিলহিলে কোমরের তন্বীদের পাশাপাশি কোনও প্লাস সাইজের তরুণীও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চ মাতালেন।

 

বস্তুত দীপিকা যে সত্যিই মঞ্চ মাতিয়েছেন, তা জানিয়েছে ওই বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলিই। তারা বলেছে, মঞ্চে দীপিকাকে দেখার পর দর্শকাসন থেকেই সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয় তাঁকে। দীপিকার হাসি, তাঁর সাঁতার পোশাকে মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়া, তাঁর আত্মবিশ্বাসী জবাব— সবেতেই করতালি শোনা গিয়েছে দর্শকাসন থেকে।

 

সংবাদমাধ্যমগুলিই লিখেছে, মনে হচ্ছিল আলোর আড়ালে থাকা বহু মহিলার প্রতিনিধি হয়ে মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন দীপিকা। অবশ্য রবিবার প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ঘোষণা হওয়ার পর তিনি নিজেও সে কথাই জানিয়েছেন।

plus size miss universe

দীপিকা জানিয়েছেন, এখানে এসে পৌঁছনোটাই তাঁর কাছে একটা বড় বিষয় ছিল। কারণ তাঁর আগে আর কোনও পৃথুলা চেহারার মহিলাকে মূল ধারার কোনও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে দেখা যায়নি। সেই অর্থে তিনি এই নিয়ে ট্যাবু ভাঙলেন। তাঁর পর আগামী দিনে চাইলে আরও প্লাস সাইজ় মহিলা সাহস করে সৌন্দর্যের দুনিয়া জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারবেন।

 

শরীরের গড়ন নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। অনেকে মানসিক অবসাদে ডুবে যান। দীপিকার বিশ্বাস, তাঁর এই সামান্য চেষ্টা এই মেয়েদেরও আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

 

দীপিকা জানেন, কারণ তিনি নিজেও এক সময় এই অবসাদের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মনের জোরে সেই বাধা পেরিয়ে এসেছেন। এখন তিনি ফিটনেসে কোন তন্বীর থেকে কম যান না। আর মনে করেন সৌন্দর্যকে ফিতেয় বেঁধে রাখা যায় না।

 

সেই বিশ্ব সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজের অংশগ্রহণ নিয়ে কী বলেছেন দীপিকা? নেপালের এই তরুণী বলেছেন, ‘‘আমার মতো গোলগাল চেহারার মেয়ে, যে সৌন্দর্যের তথাকথিত সংজ্ঞায় পড়ি না, এই মঞ্চে এসেছি বিশ্বের সমস্ত আকারের মহিলাদের প্রতিনিধি হয়ে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সুন্দর হওয়ার কোনও সংজ্ঞা হতে পারে না।’’

 

দীপিকা মনে করেন, ‘‘প্রত্যেক মহিলাই নিজের মতো করে সুন্দর। শুধু সেই সৌন্দর্যকে চিনতে হবে। ভালবাসতে হবে নিজেকে।’’ বছর কয়েক আগে তিনি নিজেও নিজের চেহারা নিয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতেন জানিয়ে দীপিকা বলেছেন, ‘‘এখন আমি নিজেকে ভালবাসি। আর এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্য।’’