কলকাতা: ভারতীয় শাস্ত্রীয় জগতে শোকের ছায়া। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে চির ঘুমের দেশে ওস্তাদ রাশিদ খান (Ustad Rashid Khan)। থেমে গেল সেতারের সুরে তাঁর কণ্ঠ। ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দানা বেঁধেছিল শিল্পীর শরীরে। তাঁর প্রতিটা সৃষ্টি আজও মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে। মঙ্গলবার দুপুর ৩.৪৫ নাগাদ প্রয়াত হন শিল্পী। প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শহরের বাইরে থেকে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনও করা হয়েছিল তাঁর। এরপর শুরু হয় একাধিক সমস্যা। মাঝেমধ্যেই প্লেটলেট নেমে যেতে থাকে। তখনই ভর্তি হতে হত হাসপাতালে। ২১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক হয়। তখন থেকেই আইটিইউ-তে ছিলেন শিল্পী। মঙ্গলবার ভোরে অবস্থা এতটাই অবনতি ঘটে, তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। বিভিন্নরকম সমস্যাও দেখা দিচ্ছে ধীরে ধীরে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সাংস্কৃতিক জগতে। এদিন হাসপাতালে এসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandyopadhyay)। জয়নগরের সভা থেকে সোজা হাসপাতালে পৌঁছেছেন তিনি । ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

 

সন্ধে ৬টা পর্যন্ত এদিন হাসপাতালেই থাকবে মৃতদেহ। দুপুর ১টায় রবীন্দ্রসদনে গানস্যালুট দেওয়া হবে ওস্তাদজীকে। বুধবার টালিগঞ্জের কবরস্থানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর। তাঁর কণ্ঠে একের পর এক গান মন কেড়েছিল ভক্তদের। হিন্দি বাংলা সমস্ত ভাষায় তাঁর কণ্ঠে মেতেছে বাঙালি। প্রিয় শিল্পীর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক শোনা থেকেই চারিদিকে প্রার্থনা হয়েছিল। সকলের মনে আশা ছিল, ঠিক ভালো হয়ে ফিরে আসবেন শিল্পী।

 

কীভাবে গানের জগতে প্রবেশ

যার সুরের মুর্ছনায় আসমুদ্র হিমাচল মুগ্ধ তিনি ছোটবেলায় গান গাইতেই চাইতেন না। বেশিক্ষণ রিওয়াজ করতেও বোর হতেন।তাঁকে যে শিল্পী হতেই হবে, তার নেপথ্যে ছিল অন্য কাহিনি। এক সাক্ষাৎকারে রাশিদ বলেছিলেন সেই গল্পও। এক বার কলকাতার ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্সে ভীমসেন জোশীর গান ছিল। রাশিদ ভেবেছিলেন, খুব কাছ থেকে ভীমসেনের গান শুনবেন। মঞ্চের পাশে এক জায়গায় বসেছিলেন। সে সময় এক উদ্যোক্তা তাঁকে সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন। সেই ঘটনা রাশিদের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। ভেবেছিলেন, ‘‘ঠিক আছে, আমি এক দিন এমন জায়গায় পৌঁছব যে, তোমাদের দৌড়তে হবে আমার পিছনে!’’ খুব অল্প দিনেই রাশিদ Ustad Rashid Khan) সেই স্থান অর্জন করেছিলেন। এক বার ডোভার লেন থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এসেছেন উদ্যোক্তারা। যে দিন ডোভার লেনে অনুষ্ঠান, তার আগেই প্যারিসে রাশিদের অনুষ্ঠান। রাশিদ সেই অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে উদ্যোক্তাদের বলেছিলেন, ‘‘আপনারা যদি প্যারিস থেকে আমাকে উড়িয়ে আনতে পারেন, তা হলে আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে গাইব।’’ উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ওস্তাদ রাশিদ খান (Ustad Rashid Khan)। ইনায়েত হুসেন খাঁ-এর তৈরি ঘরানায় তিনি বাঁধতেন গান। তাঁর তালিম ছিল ওস্তাদ নসার হুসেন খাঁ সাহিবের কাছে।

 

মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন, বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু গান করেছেন রাশিদ (Ustad Rashid Khan)।গজলের অ্যালবাম ও রবীন্দ্রনাথের গানও গেয়েছেন। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ সম্মান যেমন পেয়েছেন, তেমনই বাংলা থেকেও পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান। বাংলাকে ভালবেসে যিনি কলকাতায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই বাংলার মাটিতেই বিদায় নিলেন রাশিদ খান (Ustad Rashid Khan)। দেশ বিদেশে আজ তাঁর অগণিত ভক্ত। যার ছন্দের বর্ষণ গোটা পৃথিবী জুড়ে, তাঁর আর জীবনের ছন্দে ফেরা হল না। মুখরাতে না ফিরলেও ভক্তদের মুখে থেকেই যাবে রাশিদ খানের (Ustad Rashid Khan) উজ্জ্বল উপস্থিতি।